বাংলাদেশে শিক্ষা খাতে এমপিও (মাসিক পেমেন্ট অর্ডার) একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা সরকারের তত্ত্বাবধানে মাসিক বেতন পান। তবে এই বেতনের পরিমাণ, বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা এবং নির্ধারণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে অনেকেরই সঠিক ধারণা নেই।
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার একটি বড় অংশ এমপিওভুক্ত শিক্ষক এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীল। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে যেখানে শিক্ষার আলো পৌঁছানো চ্যালেঞ্জিং, সেসব জায়গায় এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা তাদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন।
আজকের আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো MPO ভুক্ত শিক্ষকদের বেতন ভাতা, অন্যান্য সুবিধা অসুবিধা কি কি।
এমপিওভুক্ত শিক্ষক এর প্রয়োজনীয়তা
বর্তমানে সরকার শিক্ষার মান উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে শিক্ষার মান বাড়াতে শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা সরাসরি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুক্ত থাকেন এবং তাদের মানসিক ও শিক্ষাগত বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
মুখ্য চ্যালেঞ্জসমূহ:
- মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণের অভাব:
শিক্ষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রদান করার জন্য সরকার উদ্যোগ নিলেও অধিকাংশ এমপিওভুক্ত শিক্ষক এখনো পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ পান না। - প্রযুক্তি ব্যবহার:
আধুনিক শিক্ষার অন্যতম চাহিদা হলো প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতা। অনেক শিক্ষক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে পেছনে পড়ে রয়েছেন। তাদের এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করা প্রয়োজন। - উপকরণ ও পরিবেশ:
অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত শিক্ষাপ্রযুক্তি ও উপকরণের অভাব রয়েছে। এসব সমস্যার সমাধান করলে শিক্ষার মান আরও উন্নত হবে।
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন কাঠামো
বর্তমানে বাংলাদেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন সরকার নির্ধারিত জাতীয় বেতন স্কেল অনুসারে প্রদান করা হয়। সর্বশেষ ২০১৫ সালের বেতন স্কেল অনুযায়ী, শিক্ষকদের বেতন শ্রেণি ও পদভেদে নির্ধারিত হয়। নিচে একটি ধারণা দেওয়া হলো:
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের উৎসব ভাতা এবং নববর্ষ ভাতা
উৎসব ভাতা:
২০০৪ সালে জারি করা নির্দেশনা অনুযায়ী, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মূল বেতনের ২৫% এবং কর্মচারীরা ৫০% হারে উৎসব ভাতা পেয়ে থাকেন। আজও এই নির্দেশনা কার্যকর রয়েছে। তবে সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী উৎসব ভাতা পান। এটি শিক্ষক ও কর্মচারীদের মধ্যে বৈষম্যের বিষয়টি স্পষ্ট করে।
বাংলা নববর্ষ ভাতা:
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা বাংলা নববর্ষ ভাতা হিসেবেও মূল বেতনের ২০% পান। এটি সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের জন্যও প্রযোজ্য। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো শিক্ষকের মূল বেতন ৮২৫০ টাকা হয়, তবে তিনি বছরে একবার ১৬৫০ টাকা নববর্ষ ভাতা পাবেন। অন্যদিকে, ৭১২০০ টাকা মূল বেতন ধারী একজন শিক্ষক এই ভাতা হিসেবে ১৪২৪০ টাকা পান।
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন, গ্রেড এবং যোগ্যতা (২০২৪)
সহকারী শিক্ষক:
- যোগ্যতা: স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতসহ বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা বা মানবিক বিভাগে স্নাতক ডিগ্রি বা সমমানের ডিগ্রি থাকতে হবে। সঙ্গে বিএড ডিগ্রি/সমমানের প্রশিক্ষণ থাকা বাধ্যতামূলক।
- বয়সসীমা: চাকরির জন্য আবেদনকারীর বয়স অনূর্ধ্ব ৩৫ বছর হতে হবে। তবে ইনডেক্সধারী প্রার্থীদের ক্ষেত্রে বয়সসীমা শিথিলযোগ্য।
- বেতন স্কেল:
- প্রশিক্ষিত শিক্ষকদের ক্ষেত্রে জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী ১০ম গ্রেডে বেতন স্কেল ১৬,০০০-৩৮,৬৪০ টাকা।
- প্রশিক্ষণবিহীন শিক্ষকদের জন্য প্রাথমিক বেতন শুরু হয় ১২,৫০০ টাকা থেকে, যার স্কেল ১২,৫০০-৩০,২৩০ টাকা।


এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য বেতন কাঠামো ও ভাতার পরিমাণ নির্ধারণে জাতীয় বেতন স্কেলের বাইরে অন্য কোনো পরিবর্তন এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে উৎসব ভাতা এবং বাংলা নববর্ষ ভাতার ক্ষেত্রে ২০০৪ সালের নীতিমালা এখনো কার্যকর।
অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের শুধু বেতনই নয়, বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধাও প্রদান করা হয়।
- গৃহ ভাড়া: নির্ধারিত মূল বেতনের একটি অংশ হিসেবে গৃহ ভাড়া দেওয়া হয়।
- চিকিৎসা ভাতা: চিকিৎসা সুবিধার জন্য প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ।
- উৎসব ভাতা: বছরে দুইবার উৎসব ভাতা (মূল বেতনের সমান পরিমাণ)।
- অবসর ভাতা ও পেনশন সুবিধা: চাকরি শেষে অবসর ভাতা ও পেনশন।
বেতন নির্ধারণে পরিবর্তন ও চ্যালেঞ্জ
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন স্কেল পরিবর্তনের দাবি দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে। শিক্ষকরা বেতন কাঠামো আরও উন্নত করার দাবি জানিয়ে আসছেন। বিশেষত, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকদের ক্ষেত্রে বেতনের সমতা আনয়ন একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
বাংলাদেশে শিক্ষকদের জন্য MPO ব্যবস্থা এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হলেও এটি নিয়ে বিভিন্ন সময় অসন্তোষ ও আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। চলমান সময়ে শিক্ষকদের বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য নানা দাবি উঠে আসছে। চলুন এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানি।
বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাব
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাব এবং সাম্প্রতিক আলোচনায় দেখা গেছে শিক্ষকরা সাধারণত নিম্নোক্ত কারণে বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাব উত্থাপন করেন:
- মুদ্রাস্ফীতি:
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি হলেও শিক্ষকদের বেতন একই থেকে যায়। ফলে তারা আর্থিক চাপে পড়েন। - পেশাগত মর্যাদা:
সরকারি চাকুরেদের তুলনায় এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন কম হওয়ায় তারা মর্যাদাহানির শিকার হন বলে অভিযোগ করেন। - দৈনিক খরচ:
শহরাঞ্চলে গৃহভাড়া, পরিবহন ও অন্যান্য খরচের তুলনায় শিক্ষকদের বর্তমান বেতন অপ্রতুল।
সরকারের পদক্ষেপ
সরকার এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি এবং সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন সময়ে পদক্ষেপ নিয়েছে। যেমন:
- সর্বশেষ বেতন স্কেল বাস্তবায়ন (২০১৫): জাতীয় বেতন স্কেলের আওতায় এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছিল।
- এমপিও নীতিমালা সংশোধন: নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার প্রক্রিয়া সহজতর করা হয়েছে।
- ভাতা বৃদ্ধি: চিকিৎসা ও গৃহ ভাড়ার হার বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ
- বাজেট ঘাটতি:
সরকার এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত বাজেট বরাদ্দ করলেও অনেক সময় তা পর্যাপ্ত হয় না। - প্রশিক্ষণের অভাব:
অনেক এমপিওভুক্ত শিক্ষক আধুনিক প্রশিক্ষণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। ফলে পেশাগত দক্ষতায় উন্নতি করতে বেতন কাঠামো আরও যুগোপযোগী করার প্রয়োজন দেখা দেয়। - বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নির্ভরতা:
এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মূলত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাজ করেন, যেখানে অতিরিক্ত সুবিধার অভাব রয়েছে।
বাংলাদেশের শিক্ষার মানোন্নয়নে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ভূমিকা অপরিসীম। তাদের আর্থিক নিরাপত্তা ও পেশাগত মর্যাদা নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। শিক্ষকদের উন্নত বেতন কাঠামো শুধু তাদের জীবনমানই উন্নত করবে না, বরং শিক্ষার মানও বহুগুণে বাড়াবে।
নতুন এমপিও নীতিমালা:
২০২৩ সালে সরকার নতুন এমপিও নীতিমালা নিয়ে আলোচনা করেছে। এতে উল্লেখযোগ্য কিছু পরিবর্তন অন্তর্ভুক্ত হয়েছে:
- শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন যথাসময়ে নিশ্চিত করা।
- এমপিও প্রদানের জন্য নির্ধারিত সময়সীমা নির্ধারণ।
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যোগ্যতা মূল্যায়নের মানদণ্ড আরও কঠোর করা।
এমপিওভুক্ত ও সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতার পার্থক্য
নিচে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী এবং সরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ও ভাতা সংক্রান্ত সুবিধার তুলনামূলক চিত্র দেওয়া হলো:
সরকারি সুযোগ-সুবিধা (২০২২) | বেতন-ভাতাদি | বেসরকারি সুযোগ-সুবিধা (২০২২) | বেতন-ভাতাদি |
---|---|---|---|
মূল বেতন গ্রেড | জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী | মূল বেতন গ্রেড | জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী |
বাড়ি ভাড়া ভাতা | উপজেলা ভিত্তিতে মূল বেতনের ৪৫%, ৫০%, বা ৬০% | বাড়ি ভাড়া ভাতা | নির্ধারিত ১০০০/- টাকা |
চিকিৎসা ভাতা | ১,৫০০/- | চিকিৎসা ভাতা | ৫০০/- |
বৈশাখী ভাতা | মূল বেতনের ২০% | বৈশাখী ভাতা | মূল বেতনের ২০% |
উৎসব ভাতা | ১০০% | উৎসব ভাতা | শিক্ষকদের জন্য ২৫%, কর্মচারীদের জন্য ৫০% |
বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট | গড়ে ৫% বা তার বেশি | বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট | নির্ধারিত ৫% হারে |
পদোন্নতি | বিদ্যমান | পদোন্নতি | নেই বললেই চলে |
বদলির সুযোগ | বিদ্যমান | বদলির সুযোগ | নেই |
এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের তুলনায় সরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা আর্থিক ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধায় অনেক এগিয়ে। বিশেষ করে, বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, উৎসব ভাতা এবং পদোন্নতির মতো ক্ষেত্রে এই পার্থক্য বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এমপিওভুক্তদের জন্যও সুবিধাগুলো বৃদ্ধি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার
শিক্ষকরা একটি জাতির মেরুদণ্ড। তাদের আর্থিক নিরাপত্তা, পেশাগত উন্নয়ন এবং কাজের পরিবেশ উন্নত করার মাধ্যমে শিক্ষার মান বৃদ্ধি সম্ভব। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সম্মানজনক জীবন নিশ্চিত করতে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সকলের আরও উদ্যোগী ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন।
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন সরকারের তত্ত্বাবধানে নির্ধারিত হওয়ায় এটি নির্ভরযোগ্য হলেও, অনেক শিক্ষক আরও ভালো সুযোগ-সুবিধার আশা করেন। জাতীয় বেতন স্কেলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বেতন বৃদ্ধির দাবিটি যথেষ্ট যৌক্তিক। শিক্ষকদের সম্মানজনক বেতন কাঠামো নিশ্চিত করা শিক্ষা খাতের উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত জরুরি। শিক্ষকদের বেতন কাঠামো নিয়ে আপনার আরও মতামত থাকলে মন্তব্যে শেয়ার করুন!
এমপিওভুক্ত শিক্ষক নিয়ে সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রস্নউত্তর (FAQs)
এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও সরকারি শিক্ষকদের মধ্যে মূল পার্থক্য কী?
এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন এবং তাদের বেতন-ভাতা সরকার থেকে আংশিকভাবে দেওয়া হয়। অন্যদিকে, সরকারি শিক্ষকরা পুরোপুরি সরকারি বেতন কাঠামোর আওতাভুক্ত এবং সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন।
উৎসব ভাতা কত হারে দেওয়া হয়?
এমপিওভুক্ত শিক্ষক: শিক্ষকদের জন্য উৎসব ভাতা ২৫% এবং কর্মচারীদের জন্য ৫০%।
বাংলা নববর্ষ ভাতা কি উভয় ধরনের শিক্ষকরা পান?
হ্যাঁ, উভয় ক্ষেত্রেই বাংলা নববর্ষ ভাতা মূল বেতনের ২০% হারে প্রদান করা হয়।
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পদোন্নতির সুযোগ আছে কি?
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য পদোন্নতির সুযোগ প্রায় নেই বললেই চলে। তবে সরকারি শিক্ষকদের জন্য পদোন্নতির সুযোগ বিদ্যমান।