বাংলাদেশে পেঁয়াজ এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রান্নার উপাদান। প্রতিদিনের বাজার এবং মৌসুমগত প্রভাবের কারণে এর দাম উঠানামা করে। ২০২৫-এর মাঝামাঝি সময় থেকে পেঁয়াজের দাম বেশ অনিয়মিত বৃদ্ধি ও কমে যাওয়ার প্রবণতা দেখা গেছে।
বর্তমানে খুচরা ও পাইকারি বাজারে দেশি ও আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেশ চড়েছে।
- ঢাকার কারওয়ান বাজার ও অন্যান্য বড় খুচরা বাজারে দাম পড়েছে ৫৫–৬৫ টাকা প্রতি কেজি রূপে।
- পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম ৫০-৬০ টাকা/কেজি রূপে দেখা গেছে।
- কিছু সংবাদে বলা হয়েছে, খুচরা দরে পেঁয়াজের দাম ৬৫-৭০ টাকা/কেজি তালিকা পর্যন্ত উঠেছে।
- গত কয়েক দিনের মধ্যে একাধিক হাট ও বাজারে দাম কমেছে বা আপেক্ষিক স্থিতিশীলতার লক্ষণ পাওয়া গেছে।
- প্রকৃতি ও অবস্থা: ভারি বর্ষণ ও পরিবহণ সমস্যা, আমদানির বাধা, মৌসুম সমাপ্তি ইত্যাদি কারণে সরবরাহব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ায় দাম বাড়ছে।
উপরের সব তথ্য বিশ্লেষণ করে, নিম্নলিখিত টেবিলে দেশের কিছু নির্বাচিত অঞ্চলের পেঁয়াজের দাম তালিকা দেওয়া হলো:
📊 পেঁয়াজের দাম (২০২৫)
এলাকা / বাজার | দেশি পেঁয়াজ (খুচরা / পাইকারি) | মন্তব্য / প্রেক্ষাপট |
---|---|---|
ঢাকা (খুচরা) | ৬০ – ৬৫ টাকা / কেজি | দেশের বড় নগর হওয়ায় দাম তুলনায় বেশি। |
ঢাকা (পাইকারি) | ৫২ – ৬০ টাকায় | পাইকারিতে দেশি পেঁয়াজ এই পরিসরে বিক্রি হয়েছে। |
চট্টগ্রাম | ৬০ – ৬৫ টাকার মধ্য | চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজ এ রকম দরে বিক্রি হচ্ছে। |
খুলনা | ৬০ – ৬৫ টাকার বেশি | কিছু সংবাদ অনুযায়ী খুলনায় প্রেসার বেশি, দাম দ্রুত বাড়ছে। |
সামগ্রিক দেশ | ৬৪ – ৭২ টাকার মধ্য | সামগ্রিক তথ্য বিশ্লেষণ অনুযায়ী দেশি পেঁয়াজ প্রায় এই নির্ধারিত রেঞ্জে আছে। |
খুচরা সর্বোচ্চ পর্যায়ে | ৬০ – ৭০ টাকার মধ্য | খুচরা পর্যায়ে দাম ৭০–৭৫ টাকায় পৌঁছেছে, কিছু ক্ষেত্রে ৭৫ টাকাও ছাড়িয়ে গিয়েছে। |

দাম বৃদ্ধির কারণ ও বিশ্লেষণ
পেঁয়াজের দাম বিনা কারণেই উঠে যায় না — বেশ কিছু কারণ একত্রে কাজ করে। নিচে প্রধান কারণগুলো তুলে ধরা হলো:
- মৌসুমি ব্যাপার ও চাষকাল শেষ হওয়া
পেঁয়াজের উৎপাদন সময় সীমিত। চাষ শেষের দিকে সরবরাহ কমে যায়। ফলে বাজারে চাহিদার তুলনায় মজুদ কম থাকলে দাম বাড়ে। - বৃষ্টি ও পরিবহন বাধা
যে এলাকায় পেঁয়াজ উৎপাদন হয় সেখানে ভারি বৃষ্টিপাত বা রাস্তাঘাট খারাপ হলে পার্সেল ও পরিবহন ব্যাহত হয়। ফলে সরবরাহ পৌঁছাতে বিলম্ব হয় ও দাম বাড়ে। - আমদানির বাধা ও শুল্কনীতি
ভারত বা অন্যান্য দেশের পেঁয়াজ আমদানির উপর অবরোধ বা অনুমতিপত্র (আইপি) বন্ধ হয়ে গেলে বাজারে বিদেশি পেঁয়াজ আসে না। এতে চাহিদা দেশি পেঁয়াজের দিকে ঘুরে যায় ও দাম বাড়ে। - মধ্যদামিক (middlemen) ও সিন্ডিকেট
অনেক সময়ে মাঝবাজার (মিডলম্যান) বা সিন্ডিকেট দালালরা দাম নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে থাকেন। তারা মজুদ ধরে রাখে, দাম বাড়ার প্রেক্ষাপটে বিক্রি শুরু করে। এই ব্যবসায় প্রবণতা বাজারকে অতিরিক্ত উন্মুখ করে। - চাহিদা বৃদ্ধি ও সংরক্ষণ সীমাবদ্ধতা
উৎসব, বিশেষ দিন বা জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে চাহিদা হুট করে বাড়তে পারে। পাশাপাশি পেঁয়াজ সংরক্ষণ বড় চ্যালেঞ্জ; খুব বেশি সময় রেখে রাখা দামে প্রভাব ফেলে। - মুদ্রাস্ফীতি ও বিদ্যুত ও পরিবহন খরচ
জ্বালানির দাম, ডিজেল- পেট্রোল খরচ, পরিবহনের খরচ বাড়লে পেঁয়াজ বাজারে পৌঁছাতে অতিরিক্ত খরচ যুক্ত হয় — যা শেষতঃ দাম বাড়িয়ে দেয়।
দাম নিয়ন্ত্রণ ও সরকারের ভূমিকা
- আমদানির নীতিমালার পরিমার্জন
আমদানির অনুমতি দ্রুত দেওয়া হলে বিদেশি পেঁয়াজ সহজে বাজারে প্রবেশ করতে পারে এবং অভ্যন্তরীণ দামকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা যেতে পারে। - সরকারি ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা হস্তক্ষেপ
TCB বা অন্য রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানদের মাধ্যমে পেঁয়াজ বিক্রি করা যেতে পারে যাতে সাধারণ মানুষ সস্তায় পেতে পারে। - পরিচালিত মজুদের ব্যবহার
সরকার যদি একটি মজুদ রিজার্ভ রাখে এবং দাম বাড়লে বিক্রয় শুরু করে, তা বাজারে ভারসাম্য আনতে সাহায্য করবে। - ক্রেতা সচেতনতা ও দলবদ্ধ ক্রয়
সাধারণ ক্রেতারা ব্যক্তিভাবে মজুদ খারিক করে কিনে না, বরং ন্যায্য দামে ক্রয় করতে সচেতন হলে দালাল বা কালোবাজারি হওয়া কঠিন হবে। - ভাইভ্যাক্স (ভাইভ্যাকশন) ও পরিবহন অবকাঠামো উন্নয়ন
রাস্তাঘাট মেরামত, গুদাম উন্নয়ন ও তাজা পণ্যের দ্রুত পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত হলে পেঁয়াজ কম খরচে দ্রুত বাজারে আসতে পারে।
ভবিষ্যতের প্রবণতা ও সচেতনতা
- আগামী মৌসুমে নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসলেই দাম কিছুটা কমে যেতে পারে—তবে তা নির্ভর করবে আবহাওয়া ও আমদানির অবস্থা।
- যদি ভারত বা অন্য দেশ থেকে রপ্তানি আবার বন্ধ হয়, দাম আবারও স্ফীতি দেবে।
- মজুদ ও ঠিকমতো সংরক্ষণ প্রযুক্তি উন্নয়ন ছাড়া উৎসব বা চাহিদা বেড়ে গেলে দাম দ্রুত ওঠানামা করবে।
- সাধারণ মানুষের বোঝাপড়া ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য তথ্য প্রচার প্রয়োজন।
আরও পড়ুনঃ বর্তমান বাজারে আলুর দাম কত?
উপসংহার
বর্তমানে বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম তুলনায় অনেক বেশি এবং উঠানামা প্রবণ। স্থানীয় পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজ ৫৫-৬০ টাকা/কেজি রেঞ্জে বিক্রি হচ্ছে, কিন্তু খুচরা বাজারে ৬২-৭০ টাকার মধ্যেও পৌঁছেছে। দাম বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে মৌসুমের শেষের সরবরাহ সংকট, আমদানির বাধা, পরিবহন খরচ বৃদ্ধি, ও মধ্যবর্তী ব্যবসায়ীদের ভূমিকা।
ক্রেতা ও ব্যবসায়ী উভয়ের জন্য এখন সময়ের দাবি — সচেতন হওয়া, দাম তুলনা করা, সস্তা বিকল্প খোঁজা এবং সরকারের দিক থেকে কার্যকর নীতি অঙ্গীকার। ভালো নীতি ও দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়াই ভবিষ্যতে পেঁয়াজ বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে পারে।