বর্তমানে বাংলাদেশের বাজারে আলুর দামে প্রচুর ওঠানামা দেখা যাচ্ছে। হিমাগার গেটে সরকারের নির্ধারিত ন্যূনতম দাম, পাইকারি ও খুচরায় ভিন্ন দাম, সরবরাহ ও মৌসুমের প্রভাব — এসব মিলিয়ে দামের পরিবর্তন নির্ধারণ করছে। নিচে এই বিষয়গুলি বিশ্লেষণ ও বিভিন্ন অঞ্চলের দাম টেবিলে দেওয়া হলো।

বর্তমান বাজারে আলুর দাম:
সরকারি হস্তক্ষেপ ও ন্যূনতম দাম
সরকার সম্প্রতি হিমাগার গেটে প্রতি কেজি আলুর ন্যূনতম দাম ২২ টাকা নির্ধারণ করেছে, যাতে কৃষকের স্বার্থ সুরক্ষিত হয়। এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে কৃষক ও হিমাগার মালিকদের দাবি-মতামতের আলোচনাও রয়েছে।
তবে এই ন্যূনতম দাম বাজারে সরাসরি প্রয়োগ হচ্ছে না — কারণ পাইকারি ও খুচরা স্তরে অনেক বাড়তি খরচ আছে (পরিবহন, হিমাগার ভাড়া, মধ্যস্বত্তা)।
পাইকারি ও খুচরা দামের পার্থক্য
- কিছু সংবাদ অনুসারে, পাইকারি পর্যায়ে প্রতিকেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২০–২২ টাকা এলাকায়।
- অন্যদিকে, খুচরা বাজারে ১ কেজি আলুর দাম ৫০–৬০ টাকা বা তারও বেশি reported করা হচ্ছে।
- বিশেষ করে ঢাকায়, এক জরিপ বলছে ১ কেজি আলুর গড় দাম প্রায় ৪০ টাকা।
- পূর্ববর্তী সময়ে (২০২৫ সালের জানুয়ারি) আলুর বাজারে চাপে এসে দামে বড় ধরনের পতন দেখা গিয়েছিল — সেখানে আলু ২০–৩০ টাকা প্রতি কেজি দরে বাজারে বিক্রি হচ্ছিল।
- আবার বাজার সংকট ও সরবরাহ কম থাকায় দামে বৃদ্ধি এসেছে, যেমন একটি খবর বলছে ঢাকার বাজারে আলু ৫০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে।
নতুন ও পুরাতন আলুর দাম পার্থক্য
নতুন আলু সাধারণত বেশি দামে বিক্রি হয় কারণ এর সরবরাহ সীমিত থাকে। এক সংবাদ বলেছে, রমনিয়া ও ক্যারেজ (Romana, Carriage) জাতের নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫–৩০ টাকা প্রতি কেজি।
বস্তা ও বড় পরিসরে দাম
- রাজধানীর কারওয়ান বাজারে খবর পাওয়া গেছে, এক বস্তা (৬০ কেজি) রাজশাহীর আলু বিক্রি হচ্ছে প্রায় ১২০০ টাকা।
- পাইকারি চল্লিশ কেজি বা ৫০–৬০ কেজির বস্তা দামের ওঠানামাও সংবাদে দেখা গেছে।
বর্তমান বাজারে আলুর দাম (২০২৫ সালের বর্তমান বিভিন্ন অঞ্চলে)
নিচের টেবিলটি খুচরা বাজারের আনুমানিক দামের ভিত্তিতে তৈরি করা:
অঞ্চল / বাজার | ১ কেজি খুচরা দাম (টাকা) | মন্তব্য / নোট |
---|---|---|
ঢাকা | ২০ – ২৫ | গড় বাজার দর হিসেবে বলা হয়েছে |
চট্টগ্রাম | ২০ – ২৫ | একটি সংবাদ অনুযায়ী |
খুলনা | ২২ – ২৫ | প্রাথমিক সংবাদ সূত্রে পাওয়া তথ্য |
রাজশাহী | ২০ – ২৫ | স্থানীয় বাজার ভিত্তিক তথ্য |
বরিশাল | ২২ – ২৫ | খুচরা বাজারের তথ্য |
রংপুর | ২২ – ২৫ | স্থানীয় বাজারের তথ্য |
সিলেট | ২০ – ২৫ | ব্যাপকভাবে প্রচারিত তথ্য |
ময়মনসিংহ | ২০ – ২৫ | স্থানীয় বাজার তথ্য |
দামের ওঠানামার কারণসমূহ
১. সরবরাহ ও চাহিদা
যখন সরবরাহ বেশি হয় (উৎপাদন ও মজুদের সময়), দাম কম থাকে।
Contemporary রিপোর্টে বলা হয়েছে যে কিছু সময় বাজারে আলুর দাম তিন বছরের নিম্ন পর্যায়ে গিয়েছিল।
কিন্তু বৃষ্টিপাত, সেচের অপ্রতুলতা বা ক্ষতিকারক পরিবহন পরিস্থিতি সরবরাহ কমিয়ে দিতে পারে, ফলে দাম বৃদ্ধি পায়।
২. মধ্যস্বত্তা ও পরিবহন খরচ
আলু উৎপাদন ক্ষেত্র থেকে খুচরা বাজার পর্যন্ত পৌঁছাতে বেশ কিছু মধ্যস্থ ও পরিবহন খরচ যুক্ত হয়। এই খরচ বৃদ্ধিই পাইকারি ও খুচরার দামের বড় পার্থক্য তৈরি করে।
৩. হিমাগার ভাড়া ও সংরক্ষণ খরচ
আলু যথেষ্ট সময় ধরে ভালো অবস্থায় রাখতে হিমাগার সুবিধা জরুরি। হিমাগার ভাড়া ও বিদ্যুৎ ইত্যাদির খরচ দামের উপরে চাপ দিয়ে থাকতে পারে।
৪. সরকারি নীতি ও হস্তক্ষেপ
সরকার আলুর ন্যূনতম দর নির্ধারণ, আমদানি শুল্ক সমন্বয়, প্রণোদনা, আমদানির নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি নীতিমালা গ্রহণ করে দাম স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করে।
৫. মৌসুম ও নতুন আলুর আগমন
নতুন আলু বাজারে আসলে পুরাতন আলুর সরবরাহ কমে যায়, এবং নতুন আলু তুলনামূলকভাবে ভালো চাহিদা পায় — ফলে দাম বাড়ে।
কীভাবে দামে ওঠানামা মোকাবেলা করা যায়? (কৃষক ও ক্রেতা উভয়ের জন্য নির্দেশনা)
কৃষকদের জন্য
- আলু মজুদ ও বাজার পর্যবেক্ষণ: উৎপাদনের সঠিক সময়ে সংরক্ষণ করে ভালো সময়ের বাজারে বিক্রি করা যেতে পারে।
- খরচ কমিয়ে আনা: উৎপাদন খরচ, পুদা-সেচ, বস্তা ও পরিবহন খরচ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।
- গুণমান বজায় রাখা: ভালো মানের আলু বেশি দামে বিক্রি হয়, তাই রোগ ও পচা প্রতিরোধে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।
- সংগঠন ও সমবায়: গ্রুপ ফর্ম করে বিক্রেতা, হিমাগার মালিক ও সংস্থা সঙ্গে সমন্বয় করা যেতে পারে।
ক্রেতাদের জন্য
- বিভিন্ন বাজার মূল্য যাচাই: একই এলাকার একাধিক দোকান বা আড়তে দাম যাচাই করা উচিত।
- নতুন ও পুরাতন আলুর পার্থক্য বুঝে কেনা: প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন বা পুরাতন আলু বেছে নেওয়া যেতে পারে।
- সিসি ক্যামরা ও তথ্যসূত্র ব্যবহার: সরকারি ও নির্ভরযোগ্য বাজার দর তালিকা (যেমন খাদ্যবিষয়ক সরকারি ওয়েবসাইট) দেখতে পারে।
আরও পড়ুনঃ বিকাশ লোন: কিভাবে পাবেন, কারা পাবেন?
উপসংহার
বর্তমানে বাংলাদেশের বাজারে আলুর দাম খুব বেশি পরিবর্তনশীল। খুচরা পর্যায়ে ২০–২৫ টাকা প্রতি কেজি দাম হলেও, পাইকারি ও হিমাগার স্তরে দাম অনেক কম। সরকারি ন্যূনতম দর নির্ধারণ করলেও বাজারে তা পুরোপুরি প্রতিফলিত হচ্ছে না। সরবরাহ, মৌসুম, হিমাগার খরচ ও মধ্যস্বত্তাগুলি দামের ওঠানামার মূল কারণ। কৃষক ও ক্রেতা—উভয়েরই তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি।