বিকাশ লোন: কিভাবে পাবেন, কারা পাবেন?

বর্তমান ডিজিটাল যুগে আর্থিক প্রয়োজন মেটাতে বিভিন্ন ধরনের লোন সুবিধা পাওয়া যায়। এর মধ্যে বিকাশ লোন অন্যতম, যা সিটি ব্যাংক এবং বিকাশের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত হয়। এটি একটি ডিজিটাল ন্যানো লোন, যা তাৎক্ষণিক আর্থিক চাহিদা পূরণে অত্যন্ত কার্যকর। এই আর্টিকেলে আমরা বিকাশ লোন কী, এর সুবিধা, যোগ্যতা, আবেদন প্রক্রিয়া, সুদের হার এবং পরিশোধের নিয়মাবলী নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

বিকাশ লোন কী?

বিকাশ লোন হলো সিটি ব্যাংক এবং বিকাশের একটি যৌথ উদ্যোগ, যার মাধ্যমে বিকাশ অ্যাপ ব্যবহারকারীরা খুব সহজে এবং দ্রুত ঋণ নিতে পারেন। এটি একটি জামানতবিহীন লোন, অর্থাৎ লোন পাওয়ার জন্য কোনো ধরনের জামানত বা কাগজপত্র জমা দিতে হয় না। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়, যা এটিকে অত্যন্ত সুবিধাজনক করে তোলে। এই লোনের পরিমাণ সাধারণত ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে, যা গ্রাহকের লেনদেনের ইতিহাস এবং যোগ্যতার ওপর নির্ভর করে নির্ধারিত হয়।

বিকাশ লোনের সুবিধা

বিকাশ লোনের বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য সুবিধা রয়েছে, যা এটিকে অন্যান্য লোনের থেকে আলাদা করে তোলে:

  • সহজ আবেদন প্রক্রিয়া: সম্পূর্ণ আবেদন প্রক্রিয়াটি বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়, যা অত্যন্ত সহজ এবং দ্রুত।
  • জামানতবিহীন: লোন পাওয়ার জন্য কোনো ধরনের জামানত বা কাগজপত্র জমা দিতে হয় না।
  • তাৎক্ষণিক অনুমোদন: যোগ্য গ্রাহকরা আবেদন করার সাথে সাথেই লোন পেয়ে যান।
  • স্বয়ংক্রিয় পরিশোধ: লোনের কিস্তি নির্ধারিত তারিখে বিকাশ একাউন্ট থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেওয়া হয়, যা পরিশোধ প্রক্রিয়াকে ঝামেলামুক্ত করে।
  • লোনের পরিমাণ: গ্রাহকের লেনদেনের ইতিহাস অনুযায়ী ৫০০ টাকা থেকে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত লোন পাওয়ার সুযোগ থাকে।
  • ২৪/৭ সেবা: যেকোনো সময়, যেকোনো স্থান থেকে বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে লোনের জন্য আবেদন করা যায়।

বিকাশ লোন পাওয়ার যোগ্যতা

বিকাশ লোন পাওয়ার জন্য কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতা পূরণ করতে হয়। যদিও এটি জামানতবিহীন লোন, তবে কিছু মৌলিক শর্তাবলী রয়েছে যা সিটি ব্যাংক এবং বিকাশ কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে:

  • জাতীয়তা: আবেদনকারীকে অবশ্যই বাংলাদেশি নাগরিক হতে হবে।
  • বয়স: আবেদনকারীর বয়স ১৮ বছর বা তার বেশি হতে হবে।
  • জাতীয় পরিচয়পত্র: বৈধ জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) থাকতে হবে। ড্রাইভিং লাইসেন্স বা পাসপোর্টও গ্রহণযোগ্য হতে পারে।
  • বিকাশ একাউন্ট: একটি সক্রিয় বিকাশ একাউন্ট থাকতে হবে।
  • লেনদেনের ইতিহাস: বিকাশ একাউন্টে নিয়মিত লেনদেন থাকতে হবে। আপনার লেনদেনের পরিমাণ এবং ধরন লোনের যোগ্যতা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যারা নিয়মিত লেনদেন করেন, তাদের লোন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
  • মোবাইল অপারেটর: বর্তমানে রবি, গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, টেলিটক এবং এয়ারটেল গ্রাহকরা এই লোনের জন্য যোগ্য।

বিকাশ লোন আবেদন প্রক্রিয়া

বিকাশ লোন আবেদন প্রক্রিয়া অত্যন্ত সহজ এবং কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন করা যায়:

  1. বিকাশ অ্যাপে লগইন: প্রথমে আপনার বিকাশ অ্যাপে লগইন করুন।
  2. লোন অপশন নির্বাচন: অ্যাপের হোম স্ক্রিনে ‘লোন’ বা ‘পে-লেটার’ অপশনটি খুঁজে বের করে ট্যাপ করুন।
  3. লোনের পরিমাণ নির্বাচন: আপনার জন্য নির্ধারিত লোনের পরিমাণ এবং পরিশোধের সময়সীমা দেখতে পাবেন। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী লোনের পরিমাণ নির্বাচন করুন।
  4. শর্তাবলী ও নিয়মাবলী: লোনের শর্তাবলী ও নিয়মাবলী মনোযোগ দিয়ে পড়ুন এবং সম্মতি দিন।
  5. পিন নম্বর দিয়ে নিশ্চিত করুন: আপনার বিকাশ পিন নম্বর দিয়ে লোনের আবেদন নিশ্চিত করুন।
baks loan

আবেদন সফল হলে, লোনের টাকা তাৎক্ষণিকভাবে আপনার বিকাশ একাউন্টে জমা হয়ে যাবে।

বিকাশ লোনের সুদের হার

বিকাশ লোনের সুদের হার সিটি ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত হয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্দেশিত নিয়ম মেনে বার্ষিক ৯% সুদের হার প্রযোজ্য হয়। এই সুদের হার দৈনিক ভিত্তিতে প্রযোজ্য হয়। লোনের পরিমাণ এবং পরিশোধের সময়সীমার উপর ভিত্তি করে সুদের পরিমাণ পরিবর্তিত হতে পারে। সাধারণত, লোনের সুদের হার অন্যান্য প্রচলিত লোনের তুলনায় কিছুটা বেশি হতে পারে, কারণ এটি একটি ডিজিটাল এবং জামানতবিহীন লোন। তবে, তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য এটি একটি সুবিধাজনক বিকল্প।

বিকাশ লোন পরিশোধের নিয়ম

বিকাশ লোন পরিশোধ প্রক্রিয়া অত্যন্ত সহজ এবং স্বয়ংক্রিয়। লোনের কিস্তি নির্ধারিত তারিখে আপনার বিকাশ একাউন্ট থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেওয়া হবে। তাই, লোনের কিস্তি পরিশোধের তারিখের আগে আপনার বিকাশ একাউন্টে পর্যাপ্ত ব্যালেন্স নিশ্চিত করা জরুরি। যদি আপনার একাউন্টে পর্যাপ্ত ব্যালেন্স না থাকে, তাহলে কিস্তি পরিশোধে বিলম্ব হতে পারে এবং এর জন্য অতিরিক্ত চার্জ প্রযোজ্য হতে পারে।

লোন পরিশোধের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মনে রাখা জরুরি:

  • স্বয়ংক্রিয় ডেবিট: লোনের কিস্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার বিকাশ একাউন্ট থেকে কেটে নেওয়া হবে।
  • পর্যাপ্ত ব্যালেন্স: কিস্তি পরিশোধের তারিখের আগে আপনার বিকাশ একাউন্টে পর্যাপ্ত ব্যালেন্স রাখুন।
  • এসএমএস নোটিফিকেশন: কিস্তি পরিশোধের আগে আপনি বিকাশ থেকে এসএমএস নোটিফিকেশন পাবেন।
  • ম্যানুয়াল পরিশোধ: যদি কোনো কারণে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কিস্তি কেটে নেওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে আপনি বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে ম্যানুয়ালিও কিস্তি পরিশোধ করতে পারবেন।

বিকাশ লোনের সুবিধা ও অসুবিধা

প্রতিটি আর্থিক সেবার মতো বিকাশ লোনেরও কিছু সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে।

সুবিধা:

  • দ্রুত এবং সহজলভ্য: জরুরি প্রয়োজনে দ্রুত টাকা পাওয়ার জন্য এটি একটি চমৎকার উপায়।
  • জামানতবিহীন: কোনো জামানত বা গ্যারান্টার ছাড়াই লোন পাওয়া যায়।
  • ডিজিটাল প্রক্রিয়া: সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি ডিজিটাল হওয়ায় সময় ও শ্রম বাঁচে।
  • স্বয়ংক্রিয় পরিশোধ: কিস্তি পরিশোধের ঝামেলা নেই, স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেওয়া হয়।

অসুবিধা:

  • উচ্চ সুদের হার: প্রচলিত ব্যাংক লোনের তুলনায় সুদের হার কিছুটা বেশি হতে পারে।
  • সীমিত লোনের পরিমাণ: বড় অঙ্কের লোনের জন্য এটি উপযুক্ত নয়।
  • লেনদেনের ইতিহাসের উপর নির্ভরশীল: যাদের বিকাশ একাউন্টে নিয়মিত লেনদেন নেই, তাদের লোন পাওয়ার সম্ভাবনা কম।
  • অটো-ডেবিট সমস্যা: যদি একাউন্টে পর্যাপ্ত ব্যালেন্স না থাকে, তাহলে অটো-ডেবিট ব্যর্থ হতে পারে এবং অতিরিক্ত চার্জ লাগতে পারে।

কারা বিকাশ লোন পাবেন না?

কিছু ক্ষেত্রে গ্রাহকরা বিকাশ লোন নাও পেতে পারেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণগুলো হলো:

  • অপর্যাপ্ত লেনদেন: যদি আপনার বিকাশ একাউন্টে নিয়মিত এবং পর্যাপ্ত লেনদেন না থাকে।
  • বয়স: যদি আপনার বয়স ১৮ বছরের কম হয়।
  • জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকা: বৈধ জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকলে।
  • পূর্বের লোনে খেলাপি: যদি আপনি পূর্বে কোনো লোনে খেলাপি হয়ে থাকেন বা লোনের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে থাকেন।
  • সক্রিয় বিকাশ একাউন্ট না থাকা: যদি আপনার বিকাশ একাউন্ট সক্রিয় না থাকে বা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার না করা হয়।

উপসংহার

বিকাশ লোন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সেবা, যা জরুরি প্রয়োজনে দ্রুত এবং সহজ উপায়ে ঋণ পাওয়ার সুযোগ করে দেয়। যদিও এর সুদের হার প্রচলিত ব্যাংক লোনের তুলনায় কিছুটা বেশি হতে পারে, তবে এর সহজলভ্যতা এবং জামানতবিহীন সুবিধা এটিকে অনেক মানুষের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। লোনের জন্য আবেদন করার আগে অবশ্যই এর শর্তাবলী, সুদের হার এবং পরিশোধের নিয়মাবলী ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত। সঠিক পরিকল্পনা এবং সময়মতো কিস্তি পরিশোধের মাধ্যমে বিকাশ লোন আপনার আর্থিক প্রয়োজন মেটাতে একটি নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হতে পারে।

আমি ইলিয়াস আহমেদ একজন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, আমি অনলাইন ইনকাম, পেনশন, মোবাইল ব্যাংকিং, ব্যাংক লোন এবং প্রযুক্তির নানা বিষয় নিয়ে লেখালেখি করি। আমার লেখায় সহজ এবং প্রাঞ্জল ভাষায় পাঠকদের জন্য উপকারি তথ্য সরবরাহ করি, যা তাদের দৈনন্দিন জীবনে সহায়ক হয়। আমি প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক বিষয়ে গভীর জ্ঞান অর্জন করে সেই জ্ঞান সকলের সাথে ভাগ করে নিতে বিশ্বাসী।

1 thought on “বিকাশ লোন: কিভাবে পাবেন, কারা পাবেন?”

Leave a Comment