আপনি কি জানেন কীভাবে ব্যাংক একাউন্ট খুলতে হয়? আর ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে? যদি আপনি এসব প্রশ্নের উত্তর না জেনে থাকেন, তাহলে এই অনুচ্ছেদটি আপনার জন্য।
একটি ব্যাংক একাউন্ট প্রতিটি মানুষের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা, প্রায় প্রতিটি মানুষ অনলাইন কেনাবেচা অথবা সঞ্চয়ের উদ্দেশ্য নিয়ে ব্যাংক একাউন্ট খুলতে ইচ্ছা পোষণ করে।
প্রায় প্রতিটি ব্যাংকে যেকোনো প্রকারের একাউন্ট খোলার জন্য কিছু ডকুমেন্টস বা দরকারি কাগজপত্র লাগেই, সেসকল বিষয় নিয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করতে চলেছি। কেননা, একটি সফল ব্যাংক একাউন্ট আপনার অর্থকে একটা নিরাপত্তা দিবে যার ফলে আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারবেন।
এই অনুচ্ছেদে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো একটি ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে এবং ব্যাংক একাউন্ট খোলার সময় কি কি বিষয় মাথায় রাখতে হয়।
একটি ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে?
মূলত প্রতিটি ব্যাংকের ক্ষেত্রে ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কিছু মৌলিক ডকুমেন্টস লাগবেই, যা না থাকলে আপনি কোনো একাউন্ট সফলভাবে খুলতে পারবেন না। আজকের এই আর্টিকেলে সেসকল বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
১। নাগরিকত্ব
একটি ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে? এই কথা সোজা উত্তর হলো – আপনি যদি একজন বাংলাদেশী নাগরিক হয়ে থাকেন। তাহলেই কেবল আপনি একটি ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পারবেন। বাংলাদেশের যেকোন ব্যাংকে একাউন্ট চালু করতে হলে আপনাকে অবশ্যই বাংলাদেশি হতে হবে।
২। পরিচয় পত্র
মূলত যিনি একাউন্ট তৈরি করবেন তার পরিচয় প্রমাণের জন্য বিভিন্ন প্রকারের সনদ দরকার হতে পারে। তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে জাতীয় পরিচয়পত্র। যার নামে একাউন্ট তৈরি হচ্ছে তাকে একাউন্ট হোল্ডার বলে।
একাউন্ট হোল্ডার একাউন্ট তৈরি করার সময় অবশ্যই একজন নমিনিকে সাথে নিয়ে আসবেন। কেননা, একাউন্ট তৈরি করা সময় নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্র লাগবে।
৩। পাসপোর্ট ছবি
একাউন্ট হোল্ডার বা যার নামে একাউন্ট তৈরি হচ্ছে তার সদ্য তোলা ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি সাথে নিয়ে আসতে হবে।
এবং নমিনির সদ্য তোলা ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবিও সাথে নিয়ে আসতে হবে।
৪। আবেদন ফরম
আপনার সকল দরকারি কাগজপত্র সংগ্রহ করার পর যদি আপনার কাছে আবেদন ফরম না থাকে তাহলে সবকিছুই বৃথা। তাই আপনি যে ব্যাংকে একাউন্ট তৈরি করতে চান, সে ব্যাংকে গিয়ে একটি আবেদন ফরম নিয়ে সবকিছু পূরণ করতে হবে। আপনি চাইলে অনলাইন থেকেও প্রতিটি ব্যাংকের আবেদন ফরমটি ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।
৫। ট্রেড লাইসেন্স
আপনি যদি একজন ব্যবসায়ী হয়ে থাকেন। আপনি যদি আপনার ব্যবসার নামে একটি ব্যাংক একাউন্ট চালু করতে চান, তাহলে আপনার ট্রেড লাইসেন্সের দরকার পড়বে। আয়ের সকল তথ্য একাউন্ট করার সময় উল্লেখ্য করতে হবে।
১-৪ নম্বর পয়েট গুলো প্রায় প্রতিটি ব্যাংকেই একাউন্ট তৈরির জন্য দরকার হয়। প্রতিটি তথ্য গুরুত্ব সহকারে সংগ্রহ করার পর আপনার নিকটস্থ ব্যাংকে গিয়ে একাউন্ট তৈরি করতে পারবেন।
একাউন্ট খুলতে আরোও কি কি লাগে?
একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে? এই প্রশ্নের উত্তর আগেই পেয়েছেন। তবে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে উপরে উল্লেখিত সকল তথ্যের পাশাপাশি আরোও অন্যান্য জিনিস লাগতে পারে।
এই দরকার গুলো আপনার একাউন্টের টাইপের উপর নির্ভর করবে। কেননা, ব্যাংকের প্রতিটি একাউন্টের জন্য আপনি আলাদা আলাদা দরকারি কাগজ লাগবে। আপনি যে কাজের জন্য একাউন্ট খুলবেন, সে সকল কাগজের প্রমাণ আপনাকে দেখাতে হবে।
যেমনঃ আপনি যদি কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষক হয়ে প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি ব্যাংক একাউন্ট চালু করেন সেক্ষেত্রে আপনাকে প্রতিষ্ঠানের সকল প্রমাণ দেখিয়ে ব্যাংক একাউন্ট চালু করতে পারবেন।
অন্যদিকে আপনি যদি আপনার ব্যবসায়িক লেনদেন করার জন্য ব্যাংক একাউন্ট করতে চান, তাহলে আপনাকে ট্রেড লাইসেন্সের কপি দেখাতে হবে।
ব্যাংক একাউন্ট খোলার সকল নিয়ম
পূর্বেই আমরা জেনেছি ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে। যদি আমরা ব্যাংক একাউন্ট করতে কি নিয়ম আছে তা আমরা না জানি, তাহলে ব্যাংকে গিয়ে আমাদেরকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।
যেকোন ব্যাংকে একাউন্ট তৈরি করতে হলে আপনাকে প্রথমে নিকটস্থ কোনো ব্যাংকে গিয়ে খোজ নিয়ে দেখতে হবে। একটি ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে, এই বিষয়ে ব্যাংকের প্রতিনিধির সাথে পরামর্শ করবেন।
তারপর, ব্যাংকের প্রতিনিধির কাছে একটি ফরম নিয়ে সেটা পূরণ করে জমা দিতে হবে এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে।
সকল কাগজপত্র জমাদান সম্পূর্ণ হলে আপনাকে কিছু শর্তসাপেক্ষে একাউন্ট তৈরির চার্জ প্রদান করতে হবে।
ব্যাংক একাউন্ট খোলার সুবিধা
ব্যাংক একাউন্ট খোলার বিশেষ কিছু সুবিধা রয়েছে যার কারণে বেশিরভাগ গ্রাহক তাদের পছন্দের ব্যাংকে গিয়ে একাউন্ট চালু করে থাকে। আপনি যদি কোনো ব্যাংকের গ্রাহক হয়ে থাকেন, তাহলে ওই ব্যাংক থেকে বিভিন্ন প্রকারের সুবিধা পাবেন।
বর্তমানে প্রায় প্রতিটি ব্যাংকিং সিস্টেমে অনলাইন লেনদেন করা সম্ভব হয়ে থাকে। তাই একজন ব্যাংকের গ্রাহক যেকোনো জায়গা থেকে টাকা উত্তোলন ও বিভিন্ন প্রকারের কাজ ব্যবহার করতে পারেন।
অনেক ব্যাংক আছে যারা তাদের গ্রাহককে অনলাইনে কেনাকাটা করার সুবিধা প্রদান করার জন্য ক্রেডিট কার্ড প্রদান করে থাকে। এই ক্রেডিট কার্ড দিয়ে অনলাইন থেকে যেকোনো দ্রব্য কেনাকাটা করা যায়।
পৃথিবীতে কিছু ব্যাংক রয়েছে যারা মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা প্রদান করে থাকে। এই মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে আপনি যেকোনো সময় আপনার সিমে টপআপ করতে পারবেন।
এছাড়াও আপনি ব্যাংকের ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকারের বিল যেমন- গ্যাস বিল, বিদ্যুৎ বিল, ভর্তি বিল, টোল বিল ইত্যাদি প্রদান করতে পারবেন খুব সহজেই।
ব্যাংক একাউন্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত
একটি ব্যাংক একাউন্ট প্রতিটি মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনারা হয়তো জেনে থাকবেন, আপনি যেকোনো ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে যেকোনো সময় লোন নেওয়া যায়। আপনার ব্যাংক একাউন্টের মধ্যে যদি আপনি কোনো কার্ড ইস্যু করে থাকেন, তাহলে সেই কার্ডের তথ্য কাউকে প্রদান না করা।
আপনি যদি আপনার ব্যাংক একাউন্টের তথ্য কারো সাথে শেয়ার করে থাকেন, তাহলে আপনার ব্যাংক একাউন্ট থেকে টাকা কেউ তুলে নিতে পারে। আপনি কিছু সময়ের মধ্যে আপনি রাস্তার ফকির হয়ে যেতে পারেন।
একটি ব্যাংক একাউন্ট সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত মাধ্যমে। এই একাউন্টের সহযোগিতায় যে কেউ আপনার নামে ঋণ গ্রহন করতে পারবে। যদিও এর সাথে কিছু বিষয় জড়িত থাকে।
পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কিছু ঘটনা ঘটে গেছে যা কখনো কেউ চিন্তাও করেনি। কেউ কেউ ব্যাংক একাউন্ট চালু করে রাখে কিন্তু সেই একাউন্ট একবার ব্যবহার করার পর আর ব্যবহার করেনা। ওই সকল ব্যাংক একাউন্ট ব্যবহার করে অনেকেই ঋণ নিতে পারে। তাই আপনার ব্যাংক একাউন্ট যদি পরবর্তীতে না ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই আপনার উচিত উক্ত একাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া।
একটি ব্যাংক একাউন্টের নিরাপত্তা বিভিন্ন কারণে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আপনি সতর্ক না হলে আপনার নামে বড় বড় ক্রাইম হতে পারে। তাই কোনো ব্যাংকে ব্যাংক একাউন্ট খুললে তার দেখাশোনা করার দায়িত্ব আপনার একান্ত নিজেরই।
শেষকথা
বাংলাদেশের প্রতিটি ব্যাংকের অধীনে ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে এই বিষয়ে জানতে উপরের দেওয়া অনুচ্ছেদটি ভালো করে পড়তে হবে। সকল কাগজপত্র জমাদান শেষে আপনি খুব সহজেই একটি ব্যাংক একাউন্ট তৈরি করতে পারবেন। তথ্যপ্রযুক্তি সমর্পকে আপডেট থাকতে টেকবোট এর সাথেই থাকুন।
FAQs ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে:
ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি ডকুমেন্টস দরকার?
ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য সাধারণত নিম্নলিখিত ডকুমেন্টগুলো প্রয়োজন হয়:
ন্যাশনাল আইডি কার্ড (NID) বা পাসপোর্ট: পরিচয় প্রমাণের জন্য।
পাসপোর্ট সাইজ ছবি: সাধারণত ২ কপি।
ঠিকানা প্রমাণের জন্য ডকুমেন্ট: গ্যাস/বিল/ইলেকট্রিসিটি বিল বা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ঠিকানা সার্টিফিকেট।
টিআইএন সার্টিফিকেট: প্রযোজ্য ক্ষেত্রে (বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক একাউন্টের জন্য)।
নমিনির ছবি ও পরিচয়পত্রের কপি: মৃত্যু বা জরুরি অবস্থায় একাউন্ট পরিচালনার জন্য।
ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য কি কোনো বয়সসীমা আছে?
হ্যাঁ, সাধারণত প্রাপ্তবয়স্ক (১৮ বছরের বেশি) ব্যক্তিরা ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পারেন। তবে অপ্রাপ্তবয়স্করা অভিভাবকের অনুমতিতে (মাইনর একাউন্ট) একাউন্ট খুলতে পারেন।
ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য কি ফি দিতে হয়?
বেশিরভাগ ব্যাংকে একাউন্ট খোলার জন্য কোনো প্রাথমিক ফি নেই, তবে কিছু ব্যাংকে মিনিমাম ব্যালেন্স জমা রাখতে হয়।
কত সময় লাগে ব্যাংক একাউন্ট খুলতে?
যদি আপনার সমস্ত ডকুমেন্টস সঠিক থাকে, তবে ব্যাংক একাউন্ট খোলার প্রক্রিয়া সাধারণত ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টার মধ্যে সম্পন্ন হয়। কিছু ক্ষেত্রে এটি ২-৩ কার্যদিবস পর্যন্ত সময় নিতে পারে।
ব্যাংক একাউন্ট খোলার পর কি সাথে সাথে এটিএম কার্ড পাওয়া যাবে?
সাধারণত ব্যাংক একাউন্ট খোলার পর এটিএম কার্ডের জন্য ৫ থেকে ৭ কার্যদিবস সময় লাগে। আপনাকে ব্যাংক থেকে নোটিফিকেশন দেওয়া হবে।