বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। এই দেশে অনেক সরকারি, বেসরকারি ব্যাংক রয়েছে যা মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের পিছনে অবদান রাখছে। আপনি যদি বাংলাদেশের একজন সুনাগরিক হয়ে থাকেন, তাহলে আপনাকে বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংক সম্পর্কে জানা উচিত।
একটি দেশের অর্থনৈতিক বিষয়সমূহ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটি কেন্দ্রিয় ব্যাংক থাকে। বাংলাদেশ ব্যাক হচ্ছে বাংলাদেশের কেন্দ্রিয় ব্যাংক। একটি দেশের সকল সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে।
দেশের অর্থনৈতিক মন্দা হলে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করে অর্থনৈতিক মন্দাকে দূর করে। বাংলাদেশ ব্যাংক অন্যান্য সকল ব্যাংকে ঋণ দেয় কিন্তু কোনো ব্যক্তিকে এই ব্যাংক ঋণ দেয়না।
আজকের এই অনুচ্ছেদে আমরা বাংলাদেশের সকল সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
ব্যাংক কি বা ব্যাংক কাকে বলে ?
ব্যাংক বলতে এমন একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বোঝায় যা সাধারণ মানুষের সঞ্চয় এবং কোনো প্রতিষ্ঠানের উদ্বৃত্ত অর্থ আমানত হিসেবে গ্রহণ করে এবং সেই আমানত পুঁজি গড়ে তোলে। সেই পুঁজি আসে মূলত ব্যবসায়ীদের ঋণ হিসেবে প্রদান করার ফলে।
কিন্তু, বাংলাদেশ ব্যাংক কারো কাছে আমানত গ্রহণ করে না। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে আমানত গ্রহণ করে না। বাংলাদেশের অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি বানিজ্যিক ব্যাংকগুলো আমানত গ্রহণ এবং ঋণ প্রদান করে থাকে।
বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অন্যান্য সরকারি বেসরকারি বানিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সরল সুদে ঋণ প্রদান করে থাকে। পরবর্তীতে, বানিজ্যিক ব্যাংকগুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে সরল সুদে ঋণ দিয়ে থাকে।
সুতরাং, আমরা বলতে পারি যে- ব্যাংক হচ্ছে একটি আর্থিক মধ্যস্থকারী প্রতিষ্ঠান যার প্রদান উপাদান হলো অর্থ। ব্যাংক বিশেষে, প্রতিটি ব্যাংক সাধারণ জনগনের আমানত গ্রহণ এবং সরল সুদে সাধারণ মানুষের মাঝে ঋণ প্রদান।
ব্যাংকিং কী? What is Banking
ব্যাংকিং শব্দটি ইংরেজি “Banking” থেকে এসেছে যার আভিধানিক অর্থ ব্যাংকের কার্যাবলি। কোনো ব্যাংকে যেসকল কার্যাবলি যেমন- আমানত গ্রহণ এবং মুনাফা লাভের আশায় সেই টাকা সরল সুদে কোনো প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক সহায়তা প্রদান সম্পর্কিত সকল কার্যাবলিকে ব্যাংকিং বলে।
অর্থাৎ, কোনো ব্যাংক যখন মুনাফা অর্জনের আশায় একক ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানকে সরল সুদে লোন দিয়ে থাকে এবং বিভিন্ন অবস্থায় আমানত গ্রহণ করে থাকে তখন ব্যাংকের সকল কার্যাবলিকে একত্রে ব্যাংকিং বলে।
ব্যাংক ও ব্যাংকিং এর মধ্যে পার্থক্য
ইতোমধ্যে আমরা, ব্যাংক এবং ব্যাংকিং এর সংজ্ঞা জেনেছি। ব্যাংক যা করে অর্থাৎ আর্থিক লেনদেন সম্পর্কিত যা করে থাকে তাই ব্যাংকিং। অন্যদিকে ব্যাংক হচ্ছে সেই সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠান যা মাধ্যমে ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পাদিত হয়ে থাকে।
কোনো প্রতিষ্ঠান ব্যতীত ব্যাংকিং এর সকল কার্যাবলি চলতে পারে না। তাই আমরা বলতে পারি, কোনো প্রতিষ্ঠানকে তখনই ব্যাংক বলা হবে যদি তাতে ব্যাংকিং এর কার্যাবলি সম্পাদিত হয়। এখন আমরা ব্যাংকিং এবং ব্যাংকিং এর মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কে জানবো।
ব্যাংক | ব্যাংকিং |
---|---|
ব্যাংক হলো এমন একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান যার মাধ্যমে জনগন আমানত সঞ্চয় এবং সরল সুদে ঋণ গ্রহণ করতে পারে। | ব্যাংকিং হচ্ছে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তথা ব্যাংকে যেসকল কার্যাবলি সম্পাদিত হয় সকল কাজকে একত্রে ব্যাংকিং বলে। |
ব্যাংকের আভিধানিক অর্থ হলো অধিকোষ। | ব্যাংকিং আভিধানিক অর্থ হলো ব্যাংকের কার্যাবলি। |
ব্যাংক কোন ব্যক্তির মাধ্যমে তৈরি করা যায়। | ব্যাংক হতে ব্যাংকিং এর উৎপত্তি। |
ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজের ভূমিকা পালন করে। | ব্যাংকিং হচ্ছে ব্যাংকের প্রতিদিনে কার্যাবলি। |
আইনের দ্বারা ব্যাংককে বিলোপ করা যায়।আইনের দ্বারা ব্যাংককে বিলোপ করা যায়। | ব্যাংকের দ্বারা কোনো একটি ব্যাংকিং প্রক্রিয়াকে বিলোপ করা যায়। |
ব্যাংক মূলত ব্যক্তি দ্বারা তৈরি। | ব্যাংকিং হচ্ছে ব্যক্তি দ্বারা পরিচালিত। |
উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা বলতে পারি ব্যাংক একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংকিং হচ্ছে সেই প্রতিষ্ঠানকে পরিচালনা করার জন্য কার্যাবলি।
ব্যাংকার কে বা কারা?
বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যারা নিয়োজিত থেকে আর্থিক লেনদেন, আমানত গ্রহণ, অর্থ স্থানান্তর ইত্যাদি কাজের সাথে জড়িত থাকে তাদেরকে ব্যাংকার বলে।
অর্থাৎ, একটি ব্যাংক পরিচালনা করার জন্য যেসকল কার্যাবলি থাকে, যদি সেসকল কাজ কোনো ব্যক্তি দ্বারা পরিচালিত হয়, সে ব্যক্তিকে ব্যাংকার বলে।
আরও পড়ুনঃ ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে | কিভাবে খুলতে হয়
ব্যাংকের বৈশিষ্ট্য
প্রতিটি দেশের আর্থিক লেনদেনের সকল কার্যক্রম একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক দ্বারা পরিচালিত হয়। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নাম বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সকল ব্যাংকের শীর্ষে অবস্থান করে সেই দেশের আর্থিক বাজারকে নিয়ন্ত্রন করে থাকে।
বাংলাদেশে নতুন নোট চালু করার ক্ষমতা কেবল বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছেই আছে। বাংলাদেশের অন্যান্য ব্যাংক নতুন চালু ক্ষমতা নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক আমানত গ্রহণ এবং ঋণ প্রদান করে না।
ব্যাংক যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নয়নের নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। মানুষ যখন থেকে সভ্য হতে শুরু করেছে, ঠিক তখন থেকেই ব্যাংক ব্যবসায় প্রচলিত হয়ে আসছে।
একটি ব্যাংক নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান কিন্তু অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের থেকে এটি আলাদা হবার কারণ হচ্ছে তার কার্যাবলি। কেননা, একটি প্রতিষ্ঠান ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু, একটি প্রতিষ্ঠান তা করতে পারে না।
এখন আমরা দেখে নেই একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আধুনিক ব্যাংকের কি কি বৈশিষ্ট্য থাকা প্রয়োজন।
- গঠনঃ বাংলাদেশের প্রচলিত ব্যাংকিং আইন বা কোম্পানি আইন – ১৯৯১ অনুযায়ী বাংলাদেশের সকল সরকারি বেসরকারি তফসিলিভুক্ত ও অ-তফসিলিভুক্ত ব্যাংকগুলো প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৯১ সালে কোম্পানি আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকারি সকল ব্যাংকের কার্যাবলি নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়।
- মালিকানাঃ একটি ব্যাংকের মালিকানা বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। কিছু ব্যাংকের মালিক বাংলাদেশ সরকার ও কিছু সংখ্যক ব্যাংকের মালিক আধা স্বায়ত্তশাসিত। অথবা কোনো ব্যাংকের মালিকানা সরকারি-বেসরকারি যৌথমালিকানায় গঠিত হতে পারে। এছাড়া একটি ব্যাংক একক মালিকানা, অংশীদারি মালিকানা, যৌথমূলধনী মালিকানা ও সমবায় সংগঠনরূপেও সংগঠিত হতে পারে।
- উদ্দেশ্যঃ একটি ব্যাংকের উদ্দেশ্য হচ্ছে ঋণ ব্যবসার মাধ্যমে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন করা। ব্যাংক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আমানত গ্রহণ এবং সেই আমানত বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে সরল সুদে ঋণ প্রদান করা।
- পরিচালনা পদ্ধতিঃ বাংলাদেশের প্রতিটি ব্যাংক ১৯৯১ সালে কোম্পানি আইন বা ব্যাংক আইন ১৯৯১ সালের আইন দ্বারা পরিচালিত হয়।
- আমানত গ্রহণঃ ব্যাংকের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আমানত গ্রহণ। ব্যাংক জনসাধারণ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে সঞ্চিত অর্থ বিভিন্ন শর্তে আমানত গ্রহণ করে থাকে।
- ঋণ প্রদানঃ ব্যাংক বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং জনসাধারণের কাছ থেকে নেওয়া আমানত অন্যকোনো গ্রাহক, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শিল্প প্রতিষ্ঠান সমূহকে বিভিন্ন মেয়াদে ও শর্তে ঋণ প্রদান করে থাকে। এই ঋণ প্রদানের মাধ্যমে ব্যাংক তাদের কাছ থেকে সুদ গ্রহণ করে ।
- মধ্যস্থকারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানঃ ব্যাংক হচ্ছে একটি আর্থিক মধ্যস্থকারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যার মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবসা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যস্থকারী হিসেবে কাজ করে। ব্যাংক মুলত একজনের কাছ থেকে নেওয়া আমানত গ্রহণ করে, সেই অর্থ অন্য পক্ষকে ঋণ প্রদান করে থাকে। এই জন্য বলা যায় ব্যাংক একটি মধ্যস্থকারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
- সেবা বিক্রয়ঃ ব্যাংক মূলত মুনাফা অর্জনের জন্য প্রতিষ্ঠিত হলেও এটি মূলত একটি আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে থাকে। কারণ, ব্যাংক আমানত গ্রহণ ও ঋণ প্রদান করার পাশাপাশি বিনিময়ের মাধ্যম সৃষ্টি, ইলেক্ট্রনিক ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে থাকে। এর পাশাপাশি ব্যাংক লকার ভাড়ার সেবা প্রদান করে থাকে।
- বিশ্বস্ততার প্রতীকঃ ব্যাংক এমন একটা আর্থিক প্রতিষ্ঠান যার মাধ্যমে আপনি আপনার গুচ্ছিত আমানতের সর্বোচ্চ সুরক্ষা পাবেন। এই সুরক্ষাব্যবস্থা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আপনি আশা করতে পারবেন না। তাই এটা বলাই যেতে পারে যে ব্যাংক হচ্ছে একটি বিশ্বস্ততার প্রতীক।
- অর্থনীতির চালিকাশক্তিঃ ব্যাংক একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এটি একটি দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে থাকে। দেশের প্রতিটি জনগন, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শিল্প কারখানা তাদের আমানত ব্যাংকে গুচ্ছিত রেখে মূলধন সঞ্চয়, বিনিয়োগের মাধ্যম এবং উৎপাদন প্রভৃতিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করচ
- গোপনীয়তা রক্ষাঃ ব্যাংকের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো গ্রাহকের অনুমতি ব্যতীত তথা আইনগত হস্তক্ষেপ ছাড়া ব্যাংকের হিসেব সংক্রান্ত কোনো তথ্য কারো সাথে শেয়ার করে না। প্রতিটি ব্যাংক গ্রাহকের গোপনীয়তা রক্ষা করে চলে বিধায় ব্যাংকে গোপনীয়তার প্রতীক বলা হয়।
- নিরাপত্তা প্রদানঃ ব্যাংক মূলত গ্রাহকের গুচ্ছিত আমানতের নিরাপত্তা প্রদান করে থাকে যা আপনি অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পাবেন না। আপনার জমাকৃত আমানত সর্বোচ্চ সুরক্ষা দিয়ে থাকে।
- ঝুঁকিঃ সঞ্চিত মূলধন বা আমানত হারিয়ে যাবার ভয় তো সবসময় থাকে। কিন্তু, আপনার গুচ্ছিত অর্থের সর্বোচ্চ সুরক্ষা দিয়ে থাকে। ফলে, আপনার মূলধনের দায়িত্ব নিজে নিয়ে থাকে। তাই ব্যাংককে একটি দ্বিমুখী ঝুঁকিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
- গ্রাহকদের প্রতিনিধিত্বকারীঃ ব্যাংক গ্রাহকদের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে থাকে। যার কারণে ব্যাংক বিভিন্ন খাত হতে অর্থ সংগ্রহ করে থাকে। যেমন- মডেলের পক্ষে বিমা প্রিমিয়াম, গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ এবং চেকের অর্থ ও কোম্পানির লভ্যাংশ আদায় করে । এই বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ব্যাংকগুলো জনগণের কাছে সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্যতা পায়।
উপরের আলোচনার আমরা ব্যাংকের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানলাম। এই আলোচনায় আমরা এটুকু বলতে পারি যে, আপনি যদি নিজের আমানত বা মূলধন গুচ্ছিত রাখতে চান তাহলে ব্যাংকের মতো সুরক্ষিত আর কোথাও পাবেন না।
ব্যাংক কত প্রকার ও কি কি?
ব্যাংকের প্রকারভেদের আলোচনায় আমরা মূলত বিভিন্ন প্রকারের ব্যাংক সম্পর্কে জানতে পারবো। পৃথিবীতে বিভিন্ন প্রকারের ব্যাংক দেখা যায়।
ব্যাংকের কাজের ধরণ, পরিচালনা পদ্ধতি ও নীতিমালার উপর ভিত্তি করে ব্যাংকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। এদের মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য ব্যাংকের প্রকরণ গুলো হলো-
বাণিজ্যিক ব্যাংক | সমবায় ভূমি উন্নয়ন ব্যাংক |
বিনিয়োগ ব্যাংক | কমিউনিটি উন্নয়ন ব্যাংক |
মার্চেন্ট ব্যাংক | ইসলামী ব্যাংক |
বিশেষায়িত ব্যাংক | অফশোর ব্যাংক |
সমবায় ব্যাংক |
অন্যদিকে এই সকল ব্যাংকগুলো মূলত দুইটি ভাগে আলাদা করা যায়। একটি হচ্ছে তফসিলিভুক্ত ব্যাংক এবং অপরটি অ-তফসিলিভুক্ত ব্যাংক।
তফসিলি ব্যাংক কি?
তফসিলি ব্যাংক হচ্ছে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথা বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকাভুক্ত ব্যাংক। অর্থাৎ, যেসকল ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের শর্তগুলো অনুসরণ করে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে তাদেরকে তফসিলিভুক্ত ব্যাংক বলা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৯৭২ সালের আইন অনুযায়ী তথা ৩৭ নং ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক দ্বারা অফিসিয়ালি কোন ব্যাংক তফসিলি ভুক্ত বা অ-তফসিলি ব্যাংক হিসেবে তালিকাভুক্তি করা হয়।
তফসিলিভুক্ত ব্যাংকের তালিকা
বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশের অনেক সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক রয়েছে যেগুলো বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক দ্বারা তালিকাভুক্ত। নিচে বিভিন্ন প্রকারের তফসিলিভুক্ত ব্যাংকের তালিকা ছক আকারে প্রদান করা হলো।
রাষ্ট্রয়াত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক
বাংলাদেশে ৬টি রাষ্ট্রয়াত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক রয়েছে যেগুলোর শতভাগ অথবা প্রায় শতভাগ মালিকানা বাংলাদেশ সরকারের। এই ব্যাংকগুলো সবগুলোই তফসিলিভুক্ত সরকারি ব্যাংক।
সোনালী ব্যাংক পিএলসি | রূপালী ব্যাংক পিএলসি |
জনতা ব্যাংক পিএলসি | বেসিক ব্যাংক পিএলসি |
অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি | বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পিএলসি |
বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক
বাংলাদেশে ৪৩টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক রয়েছে যেগুলোর বেশিরভাগ বা সমস্ত শেয়ার বা মালিকানা রয়েছে ব্যক্তি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে। এই ব্যাংকগুলো সবগুলোই তফসিলিভুক্ত বেসরকারি ব্যাংক। বাংলাদেশে পরিচালিত বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে ৩৩টি ব্যাংক প্রথাগত বা সাধারণ ব্যাংকিং কার্যক্রম করে থাকে।
পূবালী ব্যাংক পিএলসি | প্রিমিয়ার ব্যাংক পিএলসি |
উত্তরা ব্যাংক পিএলসি | ব্যাংক এশিয়া পিএলসি |
এবি ব্যাংক পিএলসি | মার্কেন্টাইল ব্যাংক পিএলসি |
আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি | ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি |
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি | যমুনা ব্যাংক পিএলসি |
সিটি ব্যাংক লিমিটেড | এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি |
ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড | এনআরবি ব্যাংক পিএলসি |
এনসিসি ব্যাংক লিমিটেড | পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড |
ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড | মধুমতি ব্যাংক লিমিটেড |
ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড | মিডল্যান্ড ব্যাংক লিমিটেড |
ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড | মেঘনা ব্যাংক লিমিটেড |
প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড | সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার এন্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেড |
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড | সীমান্ত ব্যাংক লিমিটেড |
সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেড | কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড |
বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেড | বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড |
ওয়ান ব্যাংক লিমিটেড | সিটিজেনস ব্যাংক পিএলসি |
ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড |
ইসলামী ব্যাংকের তালিকা
বাংলাদেশে পরিচালিত বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে ১০ টি ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম করে। ইসলামিক শরীয়াহ ভিত্তিক বাণিজ্যিক ব্যাংকের লিস্ট নিচে ছক আকারে প্রদান করা হলো।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি | ফার্স্ট সিকিউরিটিজ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড |
আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক লিমিটেড | স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড |
আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড | শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড |
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি | ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড |
এক্সিম ব্যাংক (বাংলাদেশ) | গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড |
বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংক
বাংলাদেশে ৯টি বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংক কর্মরত রয়েছে। এই বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ বাংলাদেশে আঞ্চলিক কার্যালয় ও শাখা কার্যালয় খুলে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিদেশি কিছু বানিজ্যিক ব্যাংক রয়েছে, যেসকল সকল ব্যাংক মূলত বানিজ্য করার জন্য এসেছে। নিচে বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকের তালিকা ছক আকারে প্রদান করা হলো।
সিটিব্যাংক এনএ | স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ |
এইচএসবিসি | ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান |
উরি ব্যাংক | ভারতীয় স্টেট ব্যাংক |
কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন | ব্যাংক আলফালাহ্ |
হাবিব ব্যাংক লিমিটেড |
বিশেষায়িত ব্যাংক
বাংলাদেশে ৩টি বিশেষায়িত ব্যাংক রয়েছে যেগুলোর মালিকানা বাংলাদেশ সরকারের হাতে। ব্যাংক তিনটি আলাদা আলাদা বিশেষ উদ্দেশ্য পূরণকল্পে গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশের বিশেষায়িত ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে মূলত বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য পূরণে। নিচে ৩টি বিশেষায়িত ব্যাংকের তালিকা ছক আকারে প্রদান করা হলো।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক |
রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক |
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক |
অ-তফসিলিভুক্ত ব্যাংকের তালিকা
যেসকল ব্যাংক বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হবে সেসকল ব্যাংকে অ-তফসিলিভুক্ত করা হবে। অর্থাৎ, এই সকল ব্যাংকগুলোকে অ-তফসিলি ব্যাংক বলে। বাংলাদেশে ৫টি অ-তালিকাভুক্ত ব্যাংক রয়েছে।
জুবিলী ব্যাংক | কর্মসংস্থান ব্যাংক |
গ্রামীণ ব্যাংক | পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক |
আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক |
শেষকথাঃ
উপরের আলোচনার মধ্যে আমরা ব্যাংকের সংজ্ঞা, প্রকারভেদ, ব্যাংকের বৈশিষ্ট্য এবং বিভিন্ন প্রকার ব্যাংকের ছক সম্পর্কে লেখা হয়েছে।
এসম্পর্কিত সচরাচর জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর FAQs:
ব্যাংক কি?
ব্যাংক হল একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান যা অর্থ সঞ্চয়, ঋণ দেওয়া এবং অন্যান্য আর্থিক পরিষেবা প্রদান করে।
ব্যাংক কাকে বলে?
ব্যাংককে সাধারণভাবে একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয় যা জনসাধারণের কাছ থেকে অর্থ সঞ্চয় করে এবং সেই অর্থকে ঋণ হিসেবে বিতরণ করে।
ব্যাংকগুলি কীভাবে আয় করে?
ব্যাংকগুলি তাদের আয় সঞ্চয়ী আমানত থেকে নেওয়া সুদের হার এবং ঋণের উপর প্রাপ্ত সুদের হারের মধ্যে পার্থক্য থেকে উপার্জন করে।
ব্যাংক এবং মাইক্রোফিনান্সের মধ্যে পার্থক্য কি?
ব্যাংক সাধারণত বৃহত্তর ঋণ এবং সেবা প্রদান করে, যখন মাইক্রোফিনান্স প্রতিষ্ঠানগুলি ছোট ঋণ প্রদান করে, বিশেষ করে দরিদ্র জনগণের জন্য।
ব্যাংকিং সেক্টরে নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান কে?
ব্যাংকিং সেক্টরে নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংক, যেমন বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক।